নিউট্রিশনাল পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে মাইগ্রেনকে আমি কিছু ভাগে ভাগ করি।
১)ইনফ্ল্যামাটরি মাইগ্রেন-এধরনের প্যাশেন্টদের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে মাইগ্রেন ট্রিগার করে। ইনফ্ল্যামাটরি মাইগ্রেন যাদের থাকে তারা লম্বা সময় ধরে মানসিক চাপে থাকা, দেরিতে ঘুমানো, আগেকার ইনফেকশন এবং বিশেষভাবে নির্জীব ত্বকের অধিকারজ হয়ে থাকেন।
এধরনের প্যাশেন্টদের জন্য মাচা টি, ক্যামোমাইল টি, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি এবং কোন কোন ক্ষেত্রে কম্বাইন্ড এন্টি অক্সিডেন্ট থেরাপি ব্যবহার করে এখন পর্যন্ত ভাল ফল পেয়েছি।
২)ক্রনিক স্ট্রেস/এংজাইটি বা ইমোশনাল স্ট্রেস-এটা সবচেয়ে বড় মাইগ্রেন গ্রুপ। স্ট্রেস মাইগ্রেনকে অনেকভাবে ট্রিগার করতে পারে। এই গ্রুপের জন্য সবচেয়ে ভাল কাজ করে নায়াসিন ও ম্যাগনেসিয়াম কম্বিনেশন। এরা প্রাথমিকভাবে ক্যাফেইন খেলে মাইগ্রেন কমে কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই ক্যাফেইন খাওয়ার পরপর এদের মাথাব্যথা ট্রিগার করে। এই গ্রুপের জন্য সপ্তাহে এক-দুইবারের বেশি কফি খাওয়া উচিত নয়। পাশাপাশি, সব ধরনের ম্যাগনেসিয়াম সাপ্লিমেন্ট কার্যকরও নয়, বিশেষভাবে যদি লো ব্লাড প্রেসার ইস্যু থাকে তবে ম্যাগনেসিয়াম নেয়ার আগে প্রফেশনালের পরামর্শ নেয়া উচিত।
৩)সুগার-সুইটেনার ইনডিউসড মাইগ্রেন-এটাও বিরাট এক গ্রুপ। এদের সারাক্ষন খেতে হয় এবং কিছুক্ষণ খালি পেটে থাকলেই মাইগ্রেন চিড়বিড় করে ওঠে। এর ওর কথা শুনে এরা সারাক্ষন কিছু না কিছু খেতে থাকেন এবং প্রচুর প্রসেসড ফুড খান। ফলে মাইগ্রেন আরো বেশি ট্রিগার্ড হয়। এদের হাইপোগ্লাইসেমিক টেন্ডেন্সি থাকে, অনেকেরই ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স থাকে যা পরে ডায়বেটিসের দিকে মোড় নেয়। এই গ্রুপের উচিত ইন্টারমিটেন্ট ওয়াটার ফাস্টিং শেখা। আমার কয়েকজন রোগী ফাস্টিং করে মাইগ্রেন থেকে অনেকটাই ইমপ্রুভ করেছেন।
৪)ইনসমনিয়াক মাইগ্রেন-এই গ্রুপের প্যাশেন্টদের ইনসমনিয়া থাকে। এধরনের মাইগ্রেন ম্যানেজ করা সবচেয়ে কঠিন। এক্ষেত্রে প্রায়শই মেডিকেশনের প্রয়োজন পড়ে। মেলাটোনিন এদের জন্য ভাল কাজ করে।
৫)ওমেগা থ্রি ডেফিসিয়েন্ট মাইগ্রেন- এই গ্রুপের রোগীদের পেট মোটা এবং স্তন- নিতম্ব সমান বা অপেক্ষাকৃত কম সুগঠিত হয়ে থাকে। ডায়েটে ওমেগা থ্রি-ওমেগা সিক্স রেশিওর দীর্ঘস্থায়ী ভারসাম্যহীনতা এই সমস্যার প্রধান কারন।
এধরনের প্যাশেন্টদের জন্য ওমেগা থ্রি ফিশ অয়েল/কড লিভার অয়েল, প্রোবায়োটিক্স ভাল কাজ করে।
আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, মাইগ্রেন রোগীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দিনে রোদে এবং রাতে অন্ধকারে থাকা এবং নেতিবাচক মানসিকতার মানুষকে এড়িয়ে চলা। সুগার ও আর্টিফিসিয়াল সুইটেনার সম্পুর্ন বাদ দেয়া, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিডে সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া। সম্ভব হলে ফাস্টিং করা এবং ওয়েট লিফটিং করার চেষ্টা করা।
লাইফস্টাইল চেঞ্জ মাইগ্রেনকে সম্পুর্ন নিয়ন্ত্রনে আনতে পারবে সেই গ্যারান্টি দেয়া সম্ভব না, কিন্তু অনেকেই লাইফস্টাইল চেঞ্জ করে মাইগ্রেন এটাকের পরিমান দশভাগের এক ভাগে নিয়ে আসতে পারেন।
আপনি চাইলেই তাদের একজন হতে পারেন।
মুহাম্মাদ সজল
ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট
বাংলাদেশ সেন্টার ফর রিহ্যাবিলিটেশন (বিসিআর)